তোমাদের পরীক্ষাতে কবিতা থেকে পাঁচ নম্বরের যে প্রশ্ন আসবে সেই প্রশ্নটিকে দুইটি ভাগে ভাগ করে দেওয়া থাকবে। অর্থাৎ, সরাসরি পাঁচ নম্বর দেওয়া থাকবে না, প্রশ্নটি একটি থাকবে ৫ নম্বরের কিন্তু সেটিকে ২+৩ এভাবে ভাগ করা থাকবে। তাই তোমাদের জন্য এই ‘নুন’ কবিতা থেকে কিছু দুই নম্বর এবং কিছু তিন নম্বরের প্রশ্ন আলাদা আলাদা দেওয়া হলো।
এখন তোমাদের অনেকেই বলবে যে আমাদের পরীক্ষাতে তো সরাসরি ৫ নম্বর থাকবে তাহলে কেন এভাবে দুই নম্বর এবং তিন নম্বর আলাদা করে দেওয়া হলো। আমি তোমাদের বলি যে, যেহেতু প্রশ্নগুলিকে ভাগ করে দেওয়া থাকবে তাই এইরকম আলাদা আলাদা প্রশ্নের উত্তর করাই ভালো। কারণ, কারোরই জানা নেই যে কোন প্রশ্নের সাথে কোন প্রশ্নটিকে যুক্ত করা হবে। আশা করছি তোমরা বুঝতে পেরেছ, তো নিচে প্রশ্ন এবং উত্তরগুলি ভালো করে দেখে নাও। যারা পারবে তারা এগুলোকে নোট করে নাও।
নুন কবিতা (জয় গোস্বামী ) প্রশ্ন উত্তর: 🔴প্রশ্নমান ২ 👇🏻
❝খেতে বসে রাগ চড়ে যায়❞ – বক্তা কখন খেতে বসেন? খেতে বসে রাগ চড়ে যাওয়ার কারণ কি?
👉🏻 সমাজ সচেতন কবি জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতায় বক্তা অর্থাৎ কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্র দুপুর রাতে বাড়ি ফিরে খেতে বসেন।
❝নুন❞ কবিতাটি বর্তমান সমাজের একটি দলিল। কবি কখনো বর্তমানকে অস্বীকার করেন না, বরং সমাজকে সামনে রেখে ভবিষ্যতকে বুঝতে চেষ্টা করেন। সমাজের দারিদ্রপৃষ্ঠ মানুষ অর্থের অভাবে দিশেহারা, গভীর রাতে বাড়ি ফিরে খেতে বসে দেখেন যে তার খাবার ঠান্ডা ভাতে নুন-টুকুও নেই। আর নুন না থাকায় খাবারটির স্বাদ কমে যায় এবং এই স্বাভাবিক প্রত্যাশা পূরণ না হওয়ায় বক্তার মনে রাগ জাগে।
❝আমি তার মাথায় চড়ি❞ – কথক কার মাথায় চড়েন? মাথায় চড়ার কারণ কি?
👉🏻 সত্তর দশকের বলিষ্ঠ কবি জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণটি নেওয়া হয়েছে। এখানে কথক রাগের মাথায় চলার কথা বলেছেন।
কথক সারাদিন কাজের খোঁজে কষ্ট করেও কোনো কাজ না পেয়ে দুপুররাতে বাড়ি ফিরে যখন তার খাবার ঠান্ডা ভাতে নুন টুকুও না পান, তখন তার মানসিক স্থিরতা নষ্ট হয় এবং তিনি রাগের মাথায় চড়েন। ❝মাথায় চড়া❞ শব্দগুচ্ছটি এখানে শুধুমাত্র একটি আবেগ প্রকাশের উপায়, বাস্তবিক অর্থে শারীরিক আক্রমণের ইঙ্গিত নয়।
❝আমাদের শুকনো ভাতে লবনের ব্যবস্থা হোক।❞ –এই প্রার্থনা কাদের কাছে?
👉🏻 বিংশ শতাব্দীর মানবতাবাদীর পূজারী জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণটি সংকলিত হয়েছে।
কবি অর্থাৎ এই কবিতার কেন্দ্রীয় চরিত্রের ব্যক্তিটি এতটাই দরিদ্র যে তাদেরকে শুকনো ঠান্ডা ভাত খেতে হয় আর এই ভাত খাওয়ার জন্য যে নূন্যতম প্রয়োজন নুন সেটাও পান না তাই তিনি সমাজের উচ্চ শ্রেণীর ব্যক্তিদের কাছে লবণের চাহিদা মেটানোর প্রার্থনা করেছেন। যারা না খেতে পেয়ে মরে যাওয়া মানুষদের দিকে আসার বা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় না। এই সামাজিক বৈষম্যে যেখানে একদল মানুষ প্রচুর পরিমাণে খাবার উপভোগ করে, সেখানে অন্যদিকে অনেকেই ন্যূনতম খাবারের জন্য হাহাকার করে।
❝রাত্তিরে দু–ভাই মিলে টান দিই গঞ্জিকাতে❞ – দুভাই বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে? গঞ্জিকাতে টান দেওয়ার কারন কি?
👉🏻 আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতায় দু-ভাই বলতে এখানে বাপব্যাটা অর্থাৎ পিতা ও পুত্রকে বোঝানো হয়েছে।
গরিব মানুষ অভাব অনটনের মধ্যে দিয়ে দিনাতিপাত করে। মানুষ যখন অভাব-অনটন, দুঃখ-যন্ত্রণাতে কাতর হয়ে পড়ে, তখন জীবনে সে মুহ্যমান হয়েও পড়ে। অভাবের তাড়নায়, অসুখে, ধারদেনার কষ্ট ভুলতে ও মনের যন্ত্রণাকে লাঘব করতে তখন গঞ্জিকা সেবন করতে বাধ্য হয়। এই কাজটি করে তারা তাদের হতাশা ও অসহায়তা প্রকাশ করে।
❝বাপব্যাটা দুভাই মিলে সারা পাড়া মাথায় করি❞ – সারা পাড়া মাথায় করার অর্থ কি?
👉🏻 বিংশ শতাব্দীর মানবদরদী কবি জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণটি বর্ণিত হয়েছে।
অভাবের তাড়নায় কখনও কখনও কবির মাথায় রাগ চড়ে যায়। এর কারণ সারাদিন কাজের খোঁজে বেরিয়ে কাজ না পেয়ে মধ্যরাতে বাড়ি ফিরে এবং পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য ঠান্ডা ভাতে একটু লবণ অনুসন্ধান করে যখন একটু লবণ না পেয়ে তারা তাদের অসন্তোষ ও ক্ষোভ সারা পাড়ায় প্রকাশ করে। তারা চিৎকার করে, হৈচৈ করে এবং তাদের অবস্থার কথা সকলকে জানাতে চায়। এটি একটি আক্ষেপের ভাষা, যেখানে তারা তাদের দুঃখের কথা সবার সামনে বলে।
❝করি তো কার তাতে কি?❞ – এরকম কোথায় কবি কি ইঙ্গিত করছেন?
👉🏻 সত্তরের দশকের অন্যতম সমাজমনস্ক ও মানবদরদী কবি জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণটি বর্ণিত হয়েছে।
উদ্ধৃত চরণটিতে কবি বিষয়টি পারিবারিক ব্যক্তি স্বাধীনতা ও গণতান্ত্রিক। এই কারণে তাতে অন্যের নাক গলানোর নিষ্প্রয়োজন। এই উক্তির মাধ্যমে কবি ইঙ্গিত করছেন যে, তারা খুবই দরিদ্র এবং তাদের জীবনযাত্রার মান খুবই নিম্ন। তারা প্রতিনিয়ত কষ্ট ও দুঃখ ভোগ করে। এই পরিস্থিতিতে তারা যা কিছু করে তা তাদের বাধ্যবাধকতার কারণে। তারা অন্য উপায় না দেখে এই সব কাজ করে। এখানে কবি একটি নিরাশার সুর ধরেছেন যে, তাদের এই পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ এই অসহায় মানুষগুলোকে সহযোগিতা ও সহমর্মিতার হাত বাড়ানোর জন্য কোন মানুষ এগিয়ে আসেনি।
নুন কবিতার তিন নম্বরের প্রশ্ন: 🔴প্রশ্নমান ৩ 👇🏻
❝সব দিন হয় না বাজার❞ – বাজার হয় না কেন? বাজার হলেও তা কেমন হয়?
👉🏻 সমাজ সচেতন কবি জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতায় নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনযাত্রা এবং তাদের অসহনীয় দুঃখ-কষ্টের বর্ণনা দিয়েছেন। হতদরিদ্র মানুষের দিন অতিবাহিত হয় অসুখ ও ধারদেনাতে। সাধারণ ভাতকাপড়ের কোনোরকমে কাটানো এই জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দের কোন নিশ্চয়তা থাকে না। সেই কারণে সব দিন বাজার করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না।
কোনরকমে অতিবাহিত জীবনে নিয়মিত বাজারের নিশ্চয়তা না, থাকলেও অতিরিক্ত রোজগার হলে বাজার হয় মাত্রা ছাড়া। নিম্নবিত্ত মানুষদের বেহিসাবি জীবনযাত্রার প্রবণতা এখানে স্পষ্ট হয়। এমনকি মনের মধ্যে গোপনে লালন করা সৌন্দর্য বিলাসকে বিলাপ করতে গোলাপচারা কিনে আনেন।
❝কী হবে দুঃখ করে?❞ – কবির এই মন্তব্যের কারণ কি?
👉🏻 আধুনিক কবি জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতা থেকে আলোচ্য অংশটি সংকলিত হয়েছে। কবি জয় গোস্বামী বলেছেন– সাধারণ ভাতকাপড়ে ও অসুখে-ধারদেনাতে যে জীবন নিম্নবিত্ত মানুষ প্রজন্মের পর প্রজন্ম অতিবাহিত করে, সেখানে অভাব আর বঞ্চনায় একমাত্র অবলম্বন। কিন্তু তারা জানে তাদের জীবনে যতই অপ্রাপ্তি থাকুক না কেন, কিছুতেই তাদের সেই অভাব পূরণ হবে না। তাই নিতান্ত বাধ্য হয়ে অত্যন্ত সামান্য উপকরণের মধ্যে তারা নিজেদের তৃপ্ত রাখতে শিখে নেয়। দারিদ্র্য পীড়িত জীবনের অপ্রাপ্তি বা যন্ত্রণাকে মানিয়ে নিয়ে দিন যাপনের চেষ্টা করে। দুঃখ করে কোন লাভ নেই। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, মানুষকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এবং জীবনের সকল পরিস্থিতিকে স্বীকার করে নিতে হবে।
❝রাত্তিরে দুভাই মিলে টান দিয়ে গঞ্জিকাতে❞ – এই উদ্ধৃতির মধ্য দিয়ে জীবনের কোন সত্যের প্রকাশ ঘটেছে?
👉🏻 আধুনিক যুগের সর্বশেষ বলিষ্ঠ কবি ও মানবতার পূজারী জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণটি সংকলিত হয়েছে।
কবি জয় গোস্বামী– একটি নিম্নবিত্ত পরিবারে অসহায়ভাবে কোনোরকমে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার কাহিনী বর্ণনা করেছেন। নিতান্ত বাধ্য হয়েই এই পরিবারের লোকেরা সাধারণ ভাতকাপড়ে নিজেদেরকে সন্তুষ্ট রাখতে শিখেছেন। অত্যন্ত অল্পেই খুশি হওয়া ছাড়া তাদের অন্য কোন উপায় নেই। ধারদেনা এবং অসুখের মধ্যে দিয়ে কোনোরকমে দিন কেটে যায় তাদের। কিন্তু কখনও কখনও তাদের এই দিন যাপনের গ্লানি দুর্বিসহ হয়ে ওঠে, তখন সম্পর্কের অবস্থান ভুলে নেশার মধ্যে আত্ম নিমর্জ্জন চলে। নেশায় ডুবে গিয়ে কঠোর বাস্তবতাকে অত্যন্ত কিছুক্ষণের জন্য হলেও ভুলে থাকা এই নেশার উদ্দেশ্য।
❝আমরা তো অল্পই খুশি❞ – এই অল্পে খুশি হওয়ার তাৎপর্য উল্লেখ কর।
👉🏻 বিংশ শতাব্দীর মানবতাবাদীর পূজারী জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণটি সংকলিত হয়েছে।
সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে প্রতি পদক্ষেপে যেখানে অনিশ্চয়তা, অভাব আর অসুখ নিত্য সঙ্গী, অল্পে খুশি হওয়াটা সেখানে যেন একটা বাধ্যবাধকতা। এই নিম্নবিত্ত জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য বা বিলাসিতার কোন সুযোগই নেই। সাধারণ ভাতকাপড়েই খুশি থাকতে এবং তাকেই নিত্য সঙ্গী হিসেবে মেনে নিতে হয়। তার এই বেঁচে থাকার লড়াইয়ে কোন কল্পনা অথবা সুন্দরের কার্যত প্রবেশ নিষেধ। এই হলো আলোচ্যমান অংশের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য।
❝বাড়িতে ফেরার পথে কিনে আনি গোলাপচারা❞ – গোলাপচারা কিসের ইঙ্গিত বহন করে? কেনই বা বাড়িতে ফেরার পথে গোলাপচারা কিনে আনে?
👉🏻 সত্তরের দশকের অন্যতম সমাজ মনস্ক কবি জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতায় গোলাপচারা সৌন্দর্য, সুখ ও স্বাচ্ছন্দ্যের ইঙ্গিত বহন করে।
গরিব মানুষ অভাব-অনটনের মধ্যে জীবনের অধিকাংশ সময় অতিবাহিত করে। দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে কাইক্লেশে তাদের দিন কাটে। ধারদেনা ও অসুখে তারা মুহ্যমান হয়ে পড়ে। কিন্তু মনের মনিকোটায় মাঝে মাঝে জেগে ওঠে সৌন্দর্য অনুভব করতে। তাই বাজার থেকে ফেরার পথে গোলাপচারা কিনে আনে এবং তার রোপন করে তা থেকে সৌন্দর্যরাশি হৃদয়গ্রাহী করতে চাই। কিন্তু তাতেও সংশয় এই গোলাপ চারা তারা কোথায় রোপন করবে এবং সেই গোলাপগাছে কি আদেও ফুল ফুটবে?
নুন কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর সাজেশন 🔴প্রশ্নমান ৫ 👇🏻
❝নুন❞ কবিতায় নিম্নবৃত্ত জীবনের যে ছবি ফুটে উঠেছে তা আলোচনা কর।
👉🏻 জয় গোস্বামীর সাম্প্রতিক কালের বলিষ্ঠ কবি। তিনি সামাজিক মানুষ। তাই সমাজ পরিবেশের প্রতিফলন তাঁর কাব্যে অবসম্ভববি। আধুনিক যন্ত্রনা, হতাশা, মানবিক মূল্যবোধের অবক্ষয় -এগুলি হল বর্তমান কবিতার মূল উপাদান। কবি জয় গোস্বামী বর্তমান সময়ের সমাজসচেতন করি। খেটে খাওয়া সংগ্রামী মানুষের দৈনন্দিন জীবন তাঁর কবিতার উপাদান হয়েছে নানা সময়ে। আলোচ্য ❝নুন❞ কবিতাটিও তার ব্যাতিক্রম নয়। এক নিম্নবিত্ত পরিবারের জীবনসংকট এই কবিতার মুখ্য উপজিব্য। আর কবি নিজেই তার স্রষ্টা এবং ভাষ্যকার। কবিতার সূচনাতে একটি আটপহরে দারিদ্র-পীড়িত সংসারের ছবি তুলে ধরেছেন,—
❝আমরা তো অল্পে খুশি; কী হবে দু দুঃখ করে?
আমাদের দিন চলে যায় সাধারন ভাতকাপড়ে❞
যে জীবন চাওয়া-পাওয়ার সীমিত বৃত্তের আবদ্ধ, সে জীবনে শূন্যতাও একপ্রকার আনন্দ। আকাঙ্খায় মানুষকে অসুখী করে। তাই কবি অল্পেতে খুশি। রোগে-ভোগে, ধার-দেনাতে তাঁর দিন চলে যায় কোনো রকমে। জীবন লক্ষ্যহীন বলে রাত্রিতে বাড়ি ফিরে। কবিরা দু-ভাই মিলে গঞ্জিকায় টান দেন। তিনি আরও জানিয়েছেন যে তাদের সবদিন বাজার হয় না। কারণ তাঁর সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তবু কবি খুশি, হেসে খেলে দিন চলে যায় বেশ। মাঝে মাঝে অনটন প্রকট হয়ে উঠলে দিনযাপন আরো কঠিন হয়ে পড়ে। তখন কবি গভীর রাত্রে বাড়ি ফিরে ঠান্ডা হতে একটু নুন না পেয়ে ক্ষেপে যান। দুভাই মিলে চিৎকার চেঁচামেচিতে পাড়া মাথায় করে তোলেন। তবে এর জন্য কবির কোনো লজ্জা নেই। কারণ তাদের মত তুচ্ছ সাধারন লোকের আবার লজ্জা বলে কিছু থাকে নাকি। এই প্রসঙ্গে কবির উক্তি– ❝করি তো কার তাতে কী? আমরা তো সামান্য লোক❞
সীমাহীন দারিদ্র্যের কথাঘাতে ক্ষয়িপ্রজীবন লক্ষ্যহীন পথে তার যাত্রা। বাঁচামরার চিন্তা সুদূর পরাহত। কবিও বেচে আছেন সংসার মরুভূমির গভীরে শিকড় চালিয়ে। স্বপ্নহীন একটা সংসারে হালবিহীন নৌকার নাবিক তিনি। বাঁচার প্রত্যাশা তাকে স্বোচ্চার করে তোলে। তার দাবি— ❝ আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক। ❞
এদাবি অসঙ্গত নয়। সীমাহীন অভাবের মধ্যে ন্যূনতম চাওয়া এক অন্য তাৎপর্য বহন করে। আর সুখে থাকার অলীক স্বপ্ন তখন বাঁচার প্রশ্নটাই বড় হয়ে ওঠে। কবিও সেই বাচ্চার জন্য বেঁচে থাকতে চেয়েছেন শুকনো ভাতে একটু লবণের দাবি নিয়ে।
❝ আমাদের শুকনো ভাতে লবণের ব্যবস্থা হোক। ❞ — এই উদ্ধৃত চরণটি কার, কোন কবিতার অংশ? এর তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।
👉🏻 সত্তরের দশকের অন্যতম সমাজমনস্ক ও মানবদরদী কবি জয় গোস্বামীর ❝নুন❞ কবিতা থেকে উদ্ধৃত চরণটি বর্ণিত হয়েছে।
শুকনো ভাত বলতে, বক্তা তরিতরকারী ছাড়া ভাতের কথা বলেছেন। কথাটি এক অর্থে সত্য বলে ধরে নেওয়া যায়। কারণ সব দিন হয়না বাজার। কিন্তু বাস্তবে শুকনো ভাত খাওয়া একেবারে অসম্ভব, বরং বক্তাকে এখানে মাঝেমধ্যেই ভাত এমনভাবে খেতে হয়। পর্যাপ্ত বা প্রয়োজন মতো তরকারিপাতি জোটে না। বক্তার বাড়িতে এমন ক্ষুন্নিবৃত্তির বিকল্প দূরদশা, সে বাড়ির ছেলেদের গঞ্জিকা সেবন নিন্দনীয় ঘটনা।
দুপুর রাতে বাড়ি ফিরে যখন ভাত খেতে বসেন, সেই ভাত ঠান্ডা তাও আবার তরকারি ছাড়া এবং সামান্যতম নুন ফেলবেন তাও নেই। এজন্য তিনি রেগে গিয়ে বাড়িতে বাবার সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক বা অশান্তি করেন। তার পাশে তিনি গঞ্জিকা সেবনের দোসর ভাইকেউ পান। তাদের চেঁচামেচিতে সারা পাড়া জেগে ওঠে। আর তাদের চেঁচামেচিতে পাড়ার লোকের নাকগলানোর কোন প্রয়োজন নেই। তার ইঙ্গিত এই যে, ভাতে নুন না থাকায় চিৎকার চেঁচামেচি করাটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার, ব্যক্তির স্বাধীনতা গণতান্ত্রিক দেশে এ অধীকার তাঁর আছে। তাছাড়া এ বিষয়ে যারা নাক গলাচ্ছে তারাই বরং বক্তার শুকনো ভাতে লবনের ব্যবস্থা করে দিক। তারা তো অসামান্য লোক নন, সামান্য লোক ও সামান্য চাহিদা, এইটুকু মিটে গেলে তো আর অশান্তি হয় না।
আরো পড়ো: তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্ন উত্তর (প্রেমেন্দ্র মিত্র) একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -