নমস্কার প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা, তো আজকে তোমাদের সঙ্গে যে প্রবন্ধ রচনাটি শেয়ার করা হচ্ছে সেটি হল ‘পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার‘। মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক উভয়ের ক্ষেত্রেই এটি একটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রচনা। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন স্কুলের মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষাতে এই প্রবন্ধ রচনাটি দেওয়া হয়েছে। তারপরেও তোমাদের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার / পরিবেশ দূষণ ও মানবজীবন
❝বিষে ভরা বাতাস, জলে দূষিত মেশে,
এই সব কুকীর্তি করে মানুষই হাসে।❞
ভূমিকা :—
মানুষ ও প্রকৃতির মধ্যে এক অন্তর্নিহিত সম্পর্ক। কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতি এবং প্রযুক্তির অপব্যবহারে মানুষ নিজেই আজ তার আশ্রয়স্থলকে ধ্বংস করছে। আকাশ, বাতাস, জল, গাছপালা এবং প্রাণীকূলকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে মানব সভ্যতা। প্রকৃতির এই অপরিমেয় দান মানুষকে দিয়েছে জীবনধারণের সব উপকরণ।
কিন্তু মানুষ তার প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে। শিল্পায়ন, নগরায়ণ, যানবাহনের বৃদ্ধি, এবং অসচেতন ব্যবহারের কারণে পরিবেশ আজ চরমভাবে দূষিত। এই দূষণ শুধু প্রাকৃতিক ভারসাম্যকেই বিঘ্নিত করছে না, বরং মানবজীবনের অস্তিত্বকেও প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে।
পরিবেশ দূষণের প্রেক্ষাপট :—
মানুষ তার বিদ্যা, বুদ্ধি দিয়ে এবং অনলস পরিশ্রমে তার চারপাশের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে সাজিয়েছে । প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বেশি মণিমানিক্য সংগ্রহ করে মানুষ উষর মরুভূমির বুকেও ফুটিয়েছে সোনালী ফসল । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আর স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ নানান ভাবে দূষিত হচ্ছে ।
পৃথিবী আমাদের বাড়ি, কিন্তু দিনের পর দিন আমরা নিজের বাড়িটাকেই নষ্ট করে ফেলছি পরিবেশ দূষণের মাধ্যমে। এই দূষণের কারণে আমাদের স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে, প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে আমাদের পরের প্রজন্মের জন্য এটা একটা বিপজ্জনক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।
পরিবেশ দূষণের প্রকারভেদ ও তার প্রভাব :—
১. বায়ু দূষণ:
বায়ু মানুষের জীবনের অপরিহার্য উপাদান। কিন্তু কলকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের নির্গত কার্বন-ডাই অক্সাইড, এবং জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ু আজ বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সার, এবং হাঁপানির মতো রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২. জল দূষণ:
জলের আর এক নাম জীবন। অথচ রাসায়নিক বর্জ্য, নর্দমার ময়লা, এবং শিল্প-কারখানার তরল বর্জ্য নদী ও পুকুরে মিশে জল দূষিত করছে। এর ফলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, কলেরার মতো জলবাহিত রোগের প্রকোপ বাড়ছে।
৩. শব্দ দূষণ:
যন্ত্রচালিত যানবাহনের হর্ন, মাইক্রোফোনের উচ্চ শব্দ, এবং বাজি-পটকার কোলাহলে শব্দ দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এর ফলে শ্রবণক্ষমতা হ্রাস, মানসিক চাপ, এবং উচ্চ রক্তচাপের মতো সমস্যা বাড়ছে।
৪. মাটি দূষণ:
অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার জমির উর্বরতা নষ্ট করছে। কৃষিজাত পণ্যে বিষক্রিয়ার উপস্থিতি মানব শরীরে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করছে।
৫. সোশ্যাল মিডিয়া ও মন দূষণ:
বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া একটি নতুন ধরনের দূষণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভুয়ো খবর, অপসংস্কৃতি, এবং অশ্লীল কনটেন্ট মানুষের মন এবং চিন্তাশক্তিকে দূষিত করছে। এই ‘দৃশ্য দূষণ’ কিশোর-তরুণদের মানসিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
পরিবেশ দূষণের প্রতিকার :—
"Take care of the earth and she will take care of you."
পরিবেশ দূষণ রোধে আমাদের সবার এগিয়ে আসা প্রয়োজন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিচে দেওয়া হলো—
১. গাছ লাগানো ও সংরক্ষণ: বেশি করে গাছ লাগাতে হবে এবং বনাঞ্চল ধ্বংস বন্ধ করতে হবে। গাছ বাতাস থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে অক্সিজেন ছড়ায়, যা পরিবেশ দূষণ কমাতে সাহায্য করে।
২. বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণ: কলকারখানায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসাতে হবে। যানবাহনে পরিবেশবান্ধব জ্বালানি যেমন: বিদ্যুৎ বা ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্লাস্টিক এবং কয়লা পোড়ানো বন্ধ করতে হবে।
৩. জল দূষণ রোধ: কলকারখানার বর্জ্য পরিশোধন করে নদী বা জলাশয়ে ফেলতে হবে। নর্দমার জল প্রক্রিয়াকরণে ব্যবস্থা নিতে হবে। নদী, পুকুর ও সমুদ্রকে দূষণমুক্ত রাখতে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
৪. শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ: যানবাহনের হর্ন ও মাইক্রোফোনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। বাজি-পটকার ব্যবহার কমাতে হবে।
৫. মাটির দূষণ কমানো: রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে পুনর্ব্যবহারযোগ্য পণ্যের ব্যবহার করতে হবে।
৬. সোশ্যাল মিডিয়ার সচেতন ব্যবহার: ভুয়ো খবর এবং অশ্লীল কনটেন্ট ছড়ানো বন্ধে কঠোর আইন এবং জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।
৭. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবেশবান্ধব জীবনযাত্রার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। স্কুল, কলেজ, এবং গণমাধ্যমের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
উপসংহার :—
পরিবেশ দূষণ আমাদের অস্তিত্বের ওপর এক ভয়াবহ হুমকি। মানবসভ্যতা যদি এই সংকট থেকে রক্ষা পেতে চায়, তবে প্রকৃতির সঙ্গে সহযোগিতা করতে হবে। সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখাই হলো মানবজাতির মূল লক্ষ্য।
"The Earth does not belong to us; we belong to the Earth."
আজকেই আমরা যদি পরিবেশ সুরক্ষার প্রতি সচেতন না হই, তাহলে কাল হয়তো আমাদের বসবাসের জন্য কোনো পরিবেশই থাকবে না। একমাত্র সমবেত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই আমরা পরিবেশকে দূষণমুক্ত করতে পারি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক সুন্দর পৃথিবী গড়ে তুলতে পারি।
"সজাগ হও করো প্রতিজ্ঞা, সবুজে ভরাও ধরণী।
পরিবেশকে রক্ষা করে, আনো সবারে আলোকিনী।"
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -