✳️ সংক্ষিপ্ত উত্তরধর্মী প্রশ্ন (SAQ) /(প্রশ্নের মান–2)
1.] উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে বায়ুমণ্ডলের উয়তার পরিবর্তন কীভাবে ঘটে?
👉 (i) ট্রপোস্ফিয়ারের উচ্চতা 10-16 কিমি এবং এই অঞ্চলের উষ্ণতার মান -55°C পর্যন্ত নামে।
(ii) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উচ্চতা প্রায় 50 কিমি। স্ট্যাটোপজের উয়তা 0°C। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের শেষের অঞ্চল থেকে মেসোস্ফিয়ারের প্রথম দিকের অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত, ওজোনোস্ফিয়ারের উয়তা বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় 76°C হয়।
(iii) মেসোস্ফিয়ারের উচ্চতা প্রায় 55-80 কিমি। এই অঞ্চলের উদ্ভুতা নেমে যায় -95°C হয়।
(iv) থার্মোস্ফিয়ারের উচ্চতা প্রায় 450 কিমি এবং উন্নতা বেড়ে 1200°C-তে পৌঁছায়।
2.] ওজোন স্তরে কীভাবে ওজোন অণু উৎপন্ন হয়?
👉 বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অতিবেগুনি রশ্মির উপস্থিতিতে দুটি অনুক্রমিক আলোক-রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ওজোন গ্যাসের সৃষ্টি হয়। প্রথমে দ্বিপরমাণুযুক্ত অক্সিজেন অণু অতিবেগুনি রশ্মির ফোটোন কণার (UV-B ও UV-C) দ্বারা বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন পরমাণুতে পরিণত হয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে এই অক্সিজেন পরমাণু অনুঘটকের উপস্থিতিতে অক্সিজেন অণুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওজোন গ্যাসের অণু ও তাপ উৎপন্ন করে। সমীকরণ :– O₂ + UV-রশ্মি → 2O ; O + O₂ →O₃+ তাপ
3.] ওজোন গহ্বর (Ozone Hole) কী? Ozone Hole সৃষ্টিকারী কয়েকটি পদার্থের নাম লেখো।
👉 বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যজাত কারণে বায়ুমণ্ডলের স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার-এর অন্তর্গত ওজোন স্তর পাতলা হয়ে যাবার ঘটনাকে ওজোন স্তরের ক্ষয় বা ওজোন গহ্বর (Ozone Hole) বলে।
ওজোন গহ্বর সৃষ্টিকারী রাসায়নিক পদার্থগুলি হল- CFC সমূহ, হ্যালোনসমূহ, কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCI₄), নাইট্রাস অক্সাইড (N₂O), মিথাইল ক্লোরোফর্ম (CH₃CCI₃), মিথেন (CH₄) ইত্যাদি।
4.] ওজোন স্তর ধ্বংসে NO এবং NO₂ -এর ভূমিকা উল্লেখ করো।
👉 স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে নাইট্রোজেন অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে (দ্রুতগামী বিমান, জেটপ্লেন থেকে নির্গত) ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ওজোন অণু NO ও NO₂ -এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় O₂ অণুতে পরিণত হয়।
NO + O₃ → NO₂ + O₂↑ ; O₂ →O + O ; NO₂ + O→NO + O₂↑
5.] ওজোন স্তর ধ্বংসে CFC -এর ভূমিকা উল্লেখ করো।
👉 CFC সমূহ স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন ধ্বংসে অনুঘটকের কাজ করে। অতিবেগুনি রশ্মির প্রভাবে CFC বিভাজিত হয়ে সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু সৃষ্টি করে যা O₃-এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় O₂ ও ক্লোরিন মনোক্সাইড (ClO) উৎপন্ন করে। যা ওজোনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে O₂ অণু এবং সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু উৎপন্ন করে, যা পুনরায় O₃-এর সঙ্গে বিক্রিয়ায় O₂ অণু সৃষ্টি করে। এইভাবে প্রক্রিয়াটি চক্রাকারে চলতে থাকে ফলে ওজোন স্তর ক্রমশ পাতলা হয়। পরীক্ষায় জানা গেছে যে একটি সক্রিয় ক্লোরিন পরমাণু লক্ষাধিক ওজোন অণুর বিয়োজন ঘটাতে পারে। সমীকরণ :– CFCl₃→CFCl₂ + Cl ; Cl + O₃ →ClO + O₂ ; ClO + O₃ → Cl + 2O₂
6.] গ্রিনহাউস গ্যাস কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
👉 যেসব গ্যাসীয় উপাদান ভূপৃষ্ঠ কর্তৃক বিকিরিত দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ইনফ্রারেড রশ্মি শোষণ করে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে, তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। যেমন– CO₂, CH₄, O₃, N₂O, H₂O (জলীয় বাষ্প), CFC।
7.] গ্রিনহাউস প্রভাব বলতে কী বোঝ?
👉 যে প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার সাহায্যে বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত CO₂, জলীয় বাষ্প ও অন্যান্য কয়েকটি গ্যাসীয় পদার্থ পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে না দিয়ে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত রেখে জীবজগতের বেঁচে থাকার অনুকুল পরিবেশ সৃষ্টি করে, তাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে।
8.] গ্রিনহাউস প্রভাবের উপযোগিতা আলোচনা করো।
👉 বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত CO₂, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাস পৃথিবীপৃষ্ঠ থেকে বিকিরিত তাপকে অবলোহিত রশ্মি রূপে মহাশূন্যে ফিরে যেতে না দিয়ে ভূপৃষ্ঠ ও তৎসংলগ্ন এলাকাকে এমন এক সীমার মধ্যে উত্তপ্ত রাখে, যা সমগ্র জীবকুলের পক্ষে বেঁচে থাকার অনুকূল তাপমাত্রা। গ্রিনহাউস প্রভাব না ঘটলে পৃথিবীপৃষ্ঠ ও সংলগ্ন বায়ুমণ্ডলের গড় উষ্ণতা হত -30°C, ফলে পৃথিবী জীবজগতের বেঁচে থাকার উপযুক্ত থাকত না। সুতরাং, পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে গ্রিনহাউস প্রভাবের ভূমিকা অপরিসীম।
9.] বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে? বিশ্ব উষ্ণায়ন এর কারণগুলি লেখো।
👉 মানবজাতির বিবিধ ক্রিয়াকলাপে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির পরিমাণ ক্রমাগত বাড়তে থাকায় বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির প্রভাবে সারা বিশ্বজুড়ে ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্বউয়ায়ন বলে। বিশ্বউয়ায়নের প্রধান কারণগুলি হল- (i) জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যাপক ব্যবহার, (ii)
ক্রমাগত অরণ্যচ্ছেদন তথা CO₂ -এর স্বাভাবিক গ্রাহক সংখ্যা হ্রাসের ফলে CO₂ -এর পরিমাণ বৃদ্ধি, (iii) বায়ুতে অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস, যেমন-CFC, মিথেন, নাইট্রোজেনের অক্সাইড ইত্যাদির পরিমাণ বৃদ্ধি। প্রতিবছর বায়ুমণ্ডলে CFC গ্যাসগুলির বৃদ্ধির হার প্রায় 5%। এর ফলে পৃথিবীপৃষ্ঠ কর্তৃক বিকীর্ণ ইনফ্রারেড রশ্মি বায়ুমণ্ডলে বেশি পরিমাণে শোষিত হচ্ছে। তাই পৃথিবীর গড় উন্নতা প্রতি বছর প্রায় 0.05°C করে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
10.] পরিবেশের ওপর বিশ্ব-উষ্ণায়নের প্রভাবগুলি উল্লেখ করো।
👉 পরিবেশের উপর বিশ্ব-উষ্ণায়নের প্রভাবগুলি হল–
(i) প্রতি বছর পৃথিবীর উষ্ণতা চরম হারি বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে (ii) উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে মেরু অঞ্চলের বরফের স্তুপ গলে যাবে এবং জলস্ফীতি ঘটবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের জলস্তর বৃদ্ধি পেয়ে মহাপ্লাবন দেখা দেবে। সমুদ্রের লবণাক্ত জলের প্রভাবে উর্বর কৃষিজমি চাষের অনুপযুক্ত হবে, এর ফলে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হবে। (iii) উচ্চ উষ্ণতা সহ্য করতে না পেরে বহু পতঙ্গ এবং পাখি চিরতরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, ফলে বাস্তুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (iv) সুপার সাইক্লোন, টর্নেডো আরও বিধ্বংসী আকার নেবে। (v) বিশ্বব্যাপী গ্রীষ্মকালীন বা ক্রান্তীয় রোগ ছড়িয়ে পড়বে। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ইত্যাদি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়বে।
11.] বিশ্ব উষ্ণায়ন কমানোর উপায়গুলি লেখো।
👉 বিশ্ব-উষ্ণায়ন কমানোর জন্য গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হওয়া কমাতে হবে। এর নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি নিতে হবে-
- (i) জীবাশ্ম জ্বালানি যেমন- কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদির ব্যবহার কমিয়ে অপ্রচলিত শক্তি যেমন- সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার-ভাটার শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে।
- (ii)বনভূমিকে রক্ষা করতে হবে, নতুন করে বনসৃজন করতে হবে এবং কাঠের বিকল্প পদার্থের ব্যবহারকে জনপ্রিয় করতে হবে।
- (iii) বিভিন্ন জৈব বর্জ্য পদার্থকে জৈবসারে রূপান্তরিত করে সেগুলি ব্যবহার করতে হবে।
- (iv) ক্লোরোফ্লুরোকার্বন বা CFC গ্যাসের উৎপাদন এবং ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
- (v) জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং মানুষকে বিশ্ব-উষ্ণায়নের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে হবে।
12.] জীবাশ্ম জ্বালানি সংরক্ষণের দুটি প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করো।
👉 নিত্যনতুন শিল্পায়ন ও উন্নততর জীবনযাত্রার তাগিদে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ও চাহিদা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। তাই জীবাশ্ম জ্বালানির সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় রয়েছে।
প্রয়োজনীয়তা :– (i) যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির ভান্ডার ক্রমে ফুরিয়ে আসছে এবং অদূর ভবিষ্যতে এই ভান্ডার নিঃশেষিত হয়ে যাবে। (ii) জীবাশ্ম জ্বালানি তৈরি হতে কোটি কোটি বছর সময় লেগেছে, অর্থাৎ প্রকৃতির এই সম্পদ পুনর্নবীকরণযোগ্য নয়। (iii) আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা ভেবে কিছু পরিমাণ জীবাশ্ম জ্বালানি অবশ্যই সঞ্চয় করা দরকার।
13.] ‘স্থিতিশীল উন্নয়ন’ কাকে বলে? স্থিতিশীল উন্নয়নের প্রধান কৌশলগুলি লেখো।
👉 ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রয়োজন মেটানোর সামর্থ্যের সঙ্গে আপস না করে বর্তমান প্রজন্মের প্রয়োজন মেটানোর পরিকল্পনাকে স্থিতিশীল উন্নয়ন বলে। এর ফলে পৃথিবীর প্রাকৃতিক উৎসের সীমার মধ্যে, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের পরিবেশগত, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নতি ঘটবে।
স্থিতিশীল উন্নয়নের যে কৌশল বা পদক্ষেপগুলি নেওয়া প্রয়োজন সেগুলি হল –
- (ⅰ) দূষণ নিয়ন্ত্রণ,
- (ii) অনবীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার কমানো,
- (iii) নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং বিভিন্ন অপ্রচলিত শক্তি যেমন- সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ারভাটা শক্তি, ভূতাপ শক্তি, বায়োমাস সেগুলি শক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বাড়ানো,
- (iv) বর্জ্য পদার্থের পুনর্ব্যবহার,
- (v) উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিল্পকারখানা ও যানবাহনের ইঞ্জিনের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি।
14.] সৌর বিদ্যুতের ব্যবহার লেখো।
👉 বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ-এর ব্যবহার লক্ষণীয়। (i) গ্রামে-গঞ্জে প্রচলিত বিদ্যুৎবিহীন এলাকায় আলো জ্বালাতে, পাখা, টিভি, রেডিয়ো, জলের পাম্প চালাতে, (ii) রাস্তার যানবাহন ও ট্রেনের সিগন্যাল ব্যবস্থায়,
(iii) টেলিফোন যোগাযোগ ব্যবস্থা, সমুদ্র উপকূলের বাতিঘর, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পে যন্ত্রপাতি চালাতে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে (iv) সোলার কুকারে সৌরশক্তি (সূর্যের তাপশস্তি)-কে কাজে লাগিয়ে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। (v) সোলার ওয়াটার হিটারে সূর্যের তাপকে কাজে লাগিয়ে জল গরম করা হয়।
15.] সৌরশক্তির সুবিধাগুলি লেখো।
👉 সৌরশক্তির সুবিধা গুলি হল –
- (ⅰ) সৌরশক্তি প্রবহমান ও অফুরন্ত, নিঃশেষ হবার সম্ভাবনা নেই, তাই ইচ্ছেমতো ব্যবহার করা যেতে পারে।
- (ii) কাঁচামাল ক্রয় করতে হয় না বলে রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে নিয়মিত খরচ নেই। কয়েক বছর পরপর ব্যাটারি পালটাতে হয়। তাই ব্যয়সাপেক্ষ নয়।
- (iii) এই শক্তি ব্যবহারে কোনো পরিবেশ দূষণ হয় না।
- (iv) সৌরপ্যানেল ও ব্যাটারির সাহায্যে অতিসাধারণ পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, ফলে ব্যবহার করতে সুবিধা হয়।
- (v) প্রত্যন্ত পাহাড়ি বা দুর্গম অঞ্চলে, কম মূলধনে ঝুঁকিহীনভাবে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
16.] ভূতাপ শক্তি কাকে বলে?
👉 ভূগর্ভের উত্তপ্ত শিলার তাপশক্তিকে কাজে লাগিয়ে যে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা হয়, তাকে ভূতাপীয় শক্তি বলে। আগ্নেয়গিরি বা উষ্ণ প্রস্রবণের মুখ দিয়ে একটি বড়ো এবং একটি ছোটো ব্যাসের সমকেন্দ্রিক নলকে মাটির গভীরে প্রায় 3000 মিটার চালনা করা হয়। বড়ো নলের মুখ দিয়ে সাধারণ উষ্ণতার জলকে ভূগর্ভে পাঠানো হলে, ভূগর্ভের প্রচণ্ড উত্তাপে সেই জল উচ্চচাপে বাষ্পে পরিণত হয়ে ছোটো ব্যাসের নলের মাধ্যমে দ্রুত বেগে বাইরে বেরিয়ে আসে। এই বাষ্পের চাপকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা হয়।
17.] উষ্ণ প্রস্রবণ কী?
👉 ভূ-কেন্দ্রে অনেক সময় নিউক্লিয় বিক্রিয়া সংঘটিত হয়। এই নিউক্লিয় বিক্রিয়ার ফলে প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন হয়, যা কিছু শিলাস্তরকে উত্তপ্ত করে। এই উত্তপ্ত শিলাস্তর সংলগ্ন অঞ্চলগুলিকে Hot spot বলা হয়। ভূগর্ভের জল এই Hot spot-এর সংস্পর্শে এলে উত্তপ্ত হয়ে বাষ্পে পরিণত হয় এবং উৎপন্ন হওয়া প্রচুর বাষ্প শিলামধ্যস্থ উচ্চচাপে সংনমিত হয়ে উষ্ণ প্রস্রবণ-এর মাধ্যমে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে। একেই উষ্ণ প্রস্রবণ বলে।
18.] বায়োগ্যাসের ব্যবহার উল্লেখ করো।
👉 বায়ো গ্যাসের ব্যবহার গুলি হল– (i) বায়োগ্যাস জ্বালানি রূপে রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। (ii) আলো জ্বালানোর জন্যে বায়োগ্যাস ব্যবহৃত হয়। (iii) জলসেচন কার্যে পাম্পের ইঞ্জিন চালাতে জ্বালানি রূপে বায়োগ্যাস ব্যবহার করা হয়। (iv) বায়োগ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
19.] বায়োফুয়েল কী? এর ব্যবহার উল্লেখ করো।
👉 উদ্ভিদের মৃত অংশ এবং প্রাণীর বর্জ্য পদার্থকে বলে বায়োমাস। বায়োমাস হল জৈব পদার্থ যা জ্বালানি রূপে ব্যবহৃত হয়। বায়োমাস থেকে উৎপন্ন জ্বালানিকে বায়োফুয়েল বলে। এটি পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি।
ব্যবহার :– (i) কঠিন বায়োফুয়েল হল কাঠ, বাঁশ, খড়, গৃহস্থালির আবর্জনা ইত্যাদি যা গ্রামাঞ্চলে জ্বালানিরূপে ব্যবহৃত হয়।
(ii) তরল বায়োফুয়েল হল বায়োইথানল যা ভুট্টা ও আখের ছিবড়ের সন্ধান প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়। এটি গাড়ির জ্বালানিরূপে বা পেট্রোলের সাথে মিশিয়ে ব্যবহৃত হয়।
20.] বর্জ্য পদার্থ থেকে কীভাবে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা হয়?
👉 বিভিন্ন উৎস থেকে বর্জ্য পদার্থ সংগ্রহ করে। তাকে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করে তা থেকে বিদ্যুৎশক্তি উৎপাদন করা সম্ভব। বিভিন্ন উৎস থেকে সংগৃহীত ও সম্ভিত বর্জ্যপদার্থকে চুল্লিতে নিক্ষেপ করে পোড়ানো হয় এবং এর থেকে যে প্রচুর তাপশক্তি উৎপন্ন হয় তার সাহায্যে জলের ট্যাংকে রাখা জল থেকে বাম্প উৎপন্ন হয়। এই বাষ্পের সাহায্যে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
21.] মেথানোজেনিক ব্যাকটেরিয়া বলতে কি বোঝো?
👉 মেথানোজেন হল অ্যারকি বা এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া যা স্বল্প অক্সিজেন পরিবেশে বিপাকীয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিথেন উৎপন্ন করে। সেগুলি জলাভূমিতে থাকে এবং মার্স গ্যাস (মিথেন) উৎপন্ন করে।
22.] কয়লাখনির মিথেন বলতে কী বোঝো?
👉 কয়লাখনির মিথেন হল কয়লা খনি থেকে উৎপন্ন এক প্রকারের প্রাকৃতিক গ্যাস, যা কয়লার উপরে একটি পাতলা স্তর রূপে সঞ্চিত থাকে। কয়লা খনির মিথেন-এর মধ্যে খুব অল্প পরিমাণে প্রোপেন বা বিউটেন এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড থাকে। একে শক্তির উৎস রূপে ব্যবহার করলে শক্তির প্রয়োজন কিছুটা হলেও মিটবে। বর্তমানে আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশে এটি শক্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস।
23.] ফায়ার আইস বা আগুনের বরফ কাকে বলে ও কেন?
👉 মিথেন হাইড্রেটকে (4CH₄ . 23H₂O) ফায়ার বলা হয়। কারণ, মিথেন হাইড্রেট এক ধরনের কেলাসাকার কঠিন পদার্থ। H₂O অণু দিয়ে গঠিত বরফ-সদৃশ কলাসের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ মিথেন আবদ্ধ হয়ে এর সৃষ্টি হয়।
24.] বায়ু শক্তি বলতে কী বোঝো
👉 সমুদ্র তীরবতী অঞ্চল, গিরিপথে ও মরুভূমিতে প্রচুর পরিমাণে বায়ু প্রবাহ হয় এবং বায়ু প্রবাহের বেগ অনেক বেশি হয়। তাই সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলে এবং মরুভূমিতে বড় পাখা লাগানো বায়ুকল লাগানো হয়। আর তীব্র বায়ু প্রবাহের ফলে সেই পাখা ঘুরতে থাকি আর তার মাধ্যমে টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে বায়ু শক্তি বলে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -